বউ আমার বস
চাকরিটা মাত্র
তিনমাস পেয়েছি । আজ সকালে হঠাৎ ভাইয়ের ফোন আগামী সপ্তাহে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসবি । কিন্তু
কেন তা বলল না । মাকে ফোন দিয়ে জানলাম পাত্রীপক্ষ আমাকে দেখতে চাইছে । আমি সরাসরি না
করে দিলাম । বললাম আগে মেয়ে দেখে তারপর ছেলে এখানে উল্টা কেন ? মা হেঁসে বললেন মেয়ে আমরা অনেক আগেই দেখে রেখেছি । এসব নিয়ে তোমার
বেশি চিন্তা করার দরকার নাই । যেভাবে হোক ছুটি নিয়ে চলে আসবা । আগামী রবিবার পাত্রীপক্ষ
আমাদের বাড়িতে আসবেন । মাকে কোনভাবে বুঝাতে পারলাম না, নতুন চাকরিতে এভাবে ছুটি হয়
না । আর আমি কাউকে ভালোবাসি । আমার মা বেশ রাগি আর তাই ব্যাপারটা খুলে বলার সাহস হচ্ছে
না ।
মা বললেন
তোমার বসকে বল দেখবে ঠিকই তোমার ছুটি দিয়ে দেবেন আর তুমি না পারলে আমাকে বল আমি কথা
বলছি তোমার বসের সাথে । আমি মাকে কোন রকম থামালাম । আমার মাকে দেখেছি আমাদের পরিবার
না শুধু পুরো গ্রাম তার কথায় চলতো । কোনদিন নির্বাচনে দাড়ালে নিশ্চিত জিতে জেতেন ।
কিন্তু আমাদের পরিবার মোটেও রাজনীতি পছন্দ করেন না । তবে নির্বাচনের দরকারটা কি যদি
ক্ষমতা এমনিতেই তাঁর হাতে থাকে । তাই মাকে বুঝিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম ।
অফিসের লান্স
টাইমে ডেস্কে বসে আছি । ম্যানেজার স্যার ডেকে পাঠালেন । আমি স্যারের রুমে ঢুকে দেখি
তিনি তখনও লান্স শুরু করেন নি । আমাকে দেখে খাবার বের করে বললেন আসুন একসাথে খাবার
খাই । আমি অবাক হলাম । না না স্যার ঠিক আছে । আমি অফিস ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নেব । আরে
আপনাকে বলছি খেয়ে নিতে আপনি খেয়ে নিবেন এটাই শেষ কথা বেশ ধমকের স্বরে বললেন । আরো বললেন আজকে আপনাকে আমার মেয়ের হাতের রান্না করা
খাবার খাওয়াবো । এ কথা শেষ হবার আগেই স্যারের মেয়ে এসে হাজির আমাকে দেখিয়ে বললেন ইনি
তাই না বাবা । আমি বুঝলাম না তাই আর বেশি গুরুত্ব দিলাম না । আমি কিছু না বলেই ফ্রেশ
হয়ে আসলাম আর স্যারের রুমে স্যারের সাথে বসে গেলাম খাবার খেতে । স্যার অবশ্য কখনও বাইরের
খাবার খান না । প্রতিটা খাবার এতো ভালো লাগলো যে একটু বেশিই খেয়ে ফেললাম । কিন্তু স্যার
বলছেন কি ব্যাপার ভালো হয়নি খাবার ? খাচ্ছেন না যে ? আমি বললাম স্যার অর্পূব স্বাদ
। আর খাচ্ছিতো আর পারবো না স্যার । স্যার হাসলেন
। সাথে ওনার মেয়েও । স্যারের হাসিতে লজ্জা পেলাম । খাবার শেষ করে দু’জনে একসাথে বসে
গল্প করছি । স্যার বলছেন আপনাকে এতটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন শুভ্র সাহেব ? আমি লজ্জায় লজ্জায় সত্যিটা বললাম কারণ মিথ্যা বলাটা
মা কখনো সেখান নি । স্যার সব শুনে বললেন তো কি হয়েছে ? আপনি যাবেন সমস্যা কোথায় ? আর
কিছু বলা লাগলো না । আমাকে তিনদিনের ছুটি দিয়ে দিলেন । আমি কিছুটা অবাক হচ্ছি কি হচ্ছে
এসব ? আমাকে স্যার ডেকে খাওয়ালেন আবার নিজে থেকে ছুটিও দিলেন ।
কিন্তু স্যার
আমাকে একটা প্রশ্ন করে বসলেন আমার মেয়ের রান্না কেমন ? আমি বললাম কেন স্যার খুবই ভালো । আর তেমন কোন
কথা বলা হলো না । আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজার স্যারের মেয়ে স্যারের ফোন থেকে কল দিয়ে দেখা
করতে বলল আমি দেখা করতে না চাইলে স্যারের ভয় দেখালো । আমার নতুন চাকরি আর এটা আমার
খুবই দরকার তাই আর না করতে পারলাম না । দেখা
করলাম বেশ বড় একটা রেষ্টুরেন্টে আমি কখন এতবড় রেষ্টেুরেন্টে আসিনি । দেখি সে বসে আছে
। আমকে বসতে বলে কোথায় যেন গেল । তারপর এসেই বলল কিকি খাবেন আমি নার্ভাস ফিল করছিলাম তাই বলে ফেললাম পানি । সে তো হবেই আর কি ? আমি তার হাতে মেন্যুটা ধরিয়ে
দিলাম সে বেশি কিছু অর্ডার করল না । তবে যেগুলো বলল আমি এসব খাবার কোনদিন দেখিনি ।
খাবার খেতে খেতে বলল আমাকে আপনার কেমন লাগে । আমি নিজেকে সামলে বললাম ভালো । সে বলল
আমকে বিয়ে করতে পারবেন । এরকম প্রশ্নের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না । কিছু না বলে
চলে এলাম সেদিন । তার ঠিক পরদিন সকালে শরীর খুব একটা ভালো ছিল না । তাই অফিস যাইনি
। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি সে আমার বাসায় । ভোরে এসছে আমার রুমমেট তৌসিফ বলল । আমি
বিছানা থেকে নেমে ফ্রেস হয়ে আসলাম আর সে আমাকে কিছু খাবার এনে সামনে দিয়ে বলল এতো দেরিতে
কেউ ঘুম থেকে ওঠে আমার বানানো সব খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে ।
আমি ঠান্ড
ভালো খাই বলেই খাওয়া শুরু করলাম । রাতে খাইনি বেশ খিদে পেয়েছিল তাই সবটা খেয়ে ফেললাম
। সে বলল আপনি প্লিজ রাগ করবেন না । আমি আসলে গতকাল ঠাট্টা করেছিলাম । আমি কিছুই বলিনি
। বাকি দিন কটা কেটেগেল । আজ বৃহঃস্পতিবার । আগামীকাল থেকে ছুটি ।
বেশি কিছু
ভাবলাম না । অফিস শেষ করে আনিকার সাথে দেখা করলাম । আনিকা তেমন কিছু বলল না । শুধু
শুনলো কত দিনের ছুটি ? আমি আজ যেন নিজেকে
হারিয়ে ফেলেছি । সব কেমন যানি গুলিয়ে যাচ্ছে । বারবার ভাবছি আমার মুখে কি সব কিছু লেখা
আছে । আনিকাকে এক মিনিট দাঁড়াতে বলে আমি ওয়াশ রুমে গেলাম । কিছু না ভেবেই হাত মুখ ধুলাম
। আর দাড়িয়ে আয়নাতে নিজেকে দেখছি । আনিকা আমার দেরি দেখে আমার ওয়াশ রুমে চলে আসলো ।
আমি একটু ভ্যেবাচ্যাকা খেয়ে গেছি । এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল কি হয়েছে তোমার ? চলে
আসলে কেন ? আমি কিছু বলার নেই দেখে চুপ রইলাম । তাকে বললাম আচ্ছা আমার মুখে কি সব লেখা
আছে ? সে না জানার ভান করে বলল কি গো কি বলছ এসব ?
আমি কথা না
বড়িয়ে বাইকে তাকে নিয়ে চলে আসলাম । আসার সময় লুকিং গ্লাসে বারবার তার মুখ দেখছিলাম
। কি যে অপরুপ এক মায়া মাখা মুখ । আজ যেন মায়াটা আরো বেশি দেখা যাচ্ছে । এই মায়া মাখা
মুখটা আমাকে কেউ যদি বলে আর দেখনা তা আমি পারবো না । আনিকা এ অফিসে চাকরি করছে দু’
বছর আর আমি মাত্র কয়েক মাস । কিভাবে জানি তার সাথে একটা সর্ম্পক গড়ে উঠেছে । সে যেমন
আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না আমিও তেমনি তাকে ছাড়া থাকতে পারি না । তাই পাশাপাশি ফ্লাটে থাকছি । একসাথে রান্না-ঘোরাফেরা আর অড্ডা দিলেও
একসাথে থাকছি না । কারণ আমরা অতোটা আধুনিক না । আর দু’জন মানুষ ভিন্ন জেন্ডারের একসাথে
থাকাটা তেমন ভালো দেখায় না । আনিকা বারবার বলেছে আমি তাকে না করে দিয়েছি । আমাদের সমাজে
ছেলেরা যতই অপরাধ করুক সেটা সমাজ মেনে নেবে কিন্তু একটা মেয়ের পান থেকে চুন খসলেই হয়
!! তার বিরুদ্ধে হাজারটা নানা অজানা অপরাধ তৈরি হয়ে যাবে আর লোকজন সেটা নিয়ে খুব মাতামাতি
করবে । আমার মানষিকতা এতটা খারাপ হয়নি কারণ আমার মা আমাকে সে শিক্ষা দেননি । আমার মা
আমাকে শিখিয়েছেন নারীকে সস্মান করতে ।
তাই আনিকার
সস্মানের কথা ভেবে তার সাথে থাকি না । আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি আনিকা কিন্তু চিন্তিত না
বেশ হাসি খুশিই দেখাচ্ছে তাকে । আমি তাকে বিদায়
জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । সারা রাস্তা চিন্তা করতে করতে এলাম কিভাবে সবাইকে
বোঝাবো যে আমার আমার একজন ভালোবাসা আছে । বাড়িতে পৌছে মাকে সব বললাম মা কিছুই বলল না
। পরদিন পাত্রীপক্ষ থেকে সবাই আসলেন কিন্তু আমি একটু অবাক হলাম সেখানে কেন জানিনা একটা
মেয়েকে আমার আনিকার মত দেখতে ।
আমি এটা লক্ষ্য
করলাম সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে কিন্তু আমি তার কাছে যেতে চাইলেও সে সরে
সরে যাচ্ছে । কিছুতেই তার কাছে পৌছাতে পারছি না । অবশেষে অতিথি আপ্যায়ন শেষে তার সাথে
কথা বলার সুযোগ হলো তার নামটা জানতে চাইলে বলল আমার নাম অনিমা । আর সে চলে গেল । আমি
আর কোন কথা বলতে পারলাম না । আনিকাকে ফোন দিলাম সব খুলে বলতে যাবো তার আগে সে বলল কনে
পক্ষের সবাই আমাকে পছন্দ করেছে । আমি জানতে চাইলাম তুমি কিভাবে জানলে ? সে বলল কেন
আমাকে দেখনি ? আমি ছিলাম ওখানে । কোথায় আর তুমি জেনে অবাক হবে যে আমি তোমার মতই একজনকে দেখেছি । তার নাম অনিমা তাইতো
? আমি বললাম হ্যাঁ কিন্তু তুমি .........
আনিকা বলল
, আরে বাবা অনিমা আমার যময বোন আর সে আজ আমার জন্য তোমাকে দেখতে গেছে । আর ম্যানেজারের
মেয়ে আমার কথায় তোমার সাথে অভিনয় করেছে । আমি তো অবাক এসব কি হচেছ শেষে জানলাম যে আমি
যে কোম্পানিতে আছি ওটাও আনিকাদের । শেষে তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো আর আমাদের বিয়েটা
আমার মায়ের ইচ্ছায় । বিয়েটা আগামী মাসে । আনিকার রিকোয়েষ্টে কেউ আমাকে বলেনি যে কোম্পানিটার মালিক আনিকা । এখন
কেমন জানি লাগছে বউয়ের কোম্পানিতে চাকরি করতে ।
ভাবছি এইমাসে নতুন কোন কোম্পানিতে জয়েন করবো । হাজার হোক
আগামী মাসে বিয়েতে কাউকে বলতে না হয় যে, আমি
আমার বউয়ের কোম্পানিতে জব করি । বউ আমার বস ।
আনিকাকে সব
খুলে বললাম সে রাজি না । আমি অন্য কোম্পানিতে চাকরি করি এটা সে মেনে নিতে চাইছে না
। তার কথা সব কিছু আগের মত থাকবে । আমরা আগের মতই
অফিসের ফাঁকে বাইরে দেখা করব । দূরে ঘুরতে যাবো আমার বাইকে করে । শুধু আর দূরে
থাকা লাগবে না ।
ক্লোজ-আপ টুথপেস্টের এ্যডর্ভাটাইসমেন্টের মত আজ মন
বলছে ঃ
কাছে আসো কাছে আসো , কাছে
আসো না, ও আনিকা ..... ওওও
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার
Comments
Post a Comment