স্বার্থক ভালোবাসা

শুভার ভেজা চুলের হালকা পরশে আজ  সকালের ঘুমটা ভাঙলো । সকাল সকাল স্নান করে চুল শুকাতে বসে  যদি আমাকে কখনও দেখে ঘুমিয়ে আছি । তাহলেই দুষ্টামি করবেই । ভেজা চুল গুলো মুখের উপর নিয়ে হালকা করে ছুয়ে দেয় ।

ছুটির দিন গুলিতেও তার দুষ্টামির শেষ নেই । সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙিয়ে এক অনাবিল আনন্দ উপভোগ করে সে । সকালের মিষ্টি রোদ আর শুভার দুষ্টু মিষ্টি দুষ্টামিতে ছুটির সকালটা  কখন যে কিভাবে কেটে যায় । বোঝার উপায় নেই ।

আমি  শুভাকে আমার প্রাণের চেয়েও ভালোবাসি । শুভা আমাকে কতটা ভালোবাসে তা ভাষাতে প্রকাশ করতে পারবো না । শুভার মতো লক্ষী বৌ সবার কপালে জোঠে না । আর আমার মত ভাগ্যহীন যে কিভাবে তাকে পেলাম । এটা ভেবেই পাইনা ।

বি.বিএ শেষ করে এম.বি.এ তে ভর্তি হয়েছি । অবসর কিছুটা পেলাম তখন । দিনের বেশ বড় একটা সময় ফেসবুকে কাটাতাম । শুভার সাথে প্রথম পরিচয়টা  সকলের প্রিয় অবসর কাটানোর সঙ্গী ফেসবুকের মাধ্যমে । মাঝে মাঝে লেখার অভ্যাসের কারণে অনেক লোকের সাথে নতুন নতুন পরিচয় গড়ে ওঠে । হ্যা সত্যিই ভালো লাগে যখন কেউ আমার লেখা গুলোকে ভালোবাসে । তাদের আনন্দ দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয় । তাদের অনুভূতি গুলো আমাকে প্রেরণা দেয় ।

তখন প্রতিদিন সকালে একবার করে ফেসবুক চেক করতাম । এমনই ভাবে  একদিন শুভার সাথে পরিচয় হয় আমার । আমি ভাবতেও পারিনি । এই পরিচয় থেকেই ভালোবাসা আর অবশেষে তা এক মধুর সর্ম্পকের মাধ্যমে আজীবণের হয়ে রবে । ফিল্টার মেসেজ খুব একটা পড়ি না । কিন্তু কেন জানি সেদিন শুভার মেসেজটা পড়েছিলাম । তেমন বিশেষ কিছু ছিলো না । তাও মেসেজের রিপ্লে দিতে মন চাইছিল । দিলাম রিপ্লে । একটা বারবি ডলের ফটো ছিল শুভার আইডিতে। ফেক ভেবে হয়তো অন্য কেউ এমন করতো না ।  আমার এমনটা মনেই আসেনি । আস্তে আস্তে তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠতে থাকে । আমরা একই বয়সের ছিলাম না । তাই কিছু কিছু বিষয় তার সাথে অমিল থাকলেও অনেক কিছু একই ছিল ।

জীবণ সঙ্গীর সব ভালোলাগা আপনার সাথে মিল থাকতে হবে এমন কোন কথা নয় । শুভাকে প্রথম যেদিন দেখি সে দিনই ভালো লেগে যায় তাকে । প্রথম যেদিন তার সাথে তার কথা হলো সত্যিই তার গুলো অনেক সুন্দর লাগে । মন চাই শুধুই তার কথা শুনি । এভাবে একসময় শুভাকে ভালোবেসে ফেলি আর শুভার ভালোবাসাও আমাকে পুরোটা জড়িয়ে ধরে।

শুভার রান্না করা খাবারে কখনও ঝাল বেশি থাকে না । কিন্তু ছুটির দিন গুলোতে অনেক বেশি করে ঝাল দিয়ে সে রান্না করবেই । কারণ ঐ একটা দিন আমার মিষ্টি খাবার সুযোগ হয় । সারা দিন ঝাল লাগার বাহানা করে  অনেক অনেক মিষ্টি খেতে পারি তার কাছ থেকে । মাঝে  মাঝে মিষ্টির সাথে এতটা পরিমাণ লিপষ্টিক পেটে চলে যায় যে পরদিন পেট ব্যথা আরো অনেক কিছু হয়ে থাকে । মিষ্টির নামটা আপনাদের জানালে সমস্যা আছে । শুভা আমাকে আজ থেকেই সেই  ঝাল কমানোর মিষ্টি থেকে বঞ্চিত করতে পারে । তাই এখানে বলতে পারছি না ।

শুভার সাথে দেখা করতে প্রায় একদিনের সফর করতে হতো বাসে । তবু যেতাম । সর্ম্পূণ অপরিচিত এক নতুন জায়গায় । একটা ভয় লাগতো সব সময় । কখনো শুভার পরিচিত কারো সামনে আমরা যেন না পড়ি । আমি একতো সেখানে নতুন । আর দ্বিতীয় শুভার বাবা কখনও এভাবে আমাদের কথা জানতে পারলে সেটা শুভার জন্য মোটওে ভালো হবে না ।

শুভাকে নিয়ে তাদের এলাকাতে  অনেক ঘুরেছি । আমরা চাইলেই পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম । কিন্তু আমরা তা করিনি । কারণ আমরা পরিবারকে ভালোবাসতাম । তাই সাহস করে আমাদের ভালোবাসার কথা জানাতে পেরেছি । সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় । সব কিছু ঠিক আছে ।

নীল শাড়িতে তাকে খুব সুন্দর লাগে । নীল শাড়ি সে সবসময় পরে না । আমি তার জন্য বেশি নীল শাড়িই কিনি । নীল শাড়ি সে বিশেষ বিশেষ দিনে পরে । সত্যিই নীল শাড়িতে তাকে অর্পূব লাগে । । আজও নীল শাড়ি পরেছে । তার মানে আজও বিশেষ কোনও দিন । আজ আবার ভুলে গেছি কি আজ । ডাইরিটা বের করতে হবে । শুভার নীল শাড়ি পরা দেখলেই আমার ডাইরী ঘাটা লাগে । কবে কি সে সব লেখা আছে ডাইরিতে ।

শুভার আর আমার মিলন এতটা সহজ ছিল না । আমি সবে একটা কোম্পানিতে জব পেয়েছি । আমরা দু’ জন দুজনকে তো প্রাণের চেয়ে ভালোবাসতাম । কিন্তু আমাদের পরিবারে আমদের বিয়ে নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় । আমার পরিবার অনেকটা খোলা মন মানসিকতার থাকলেও । শুভার পরিবার চাইতো শুভা অনেক সুখে থাকুক । একজন সরকারি চাকুরিজীবির সাথে বিয়ে দিতে । তাই হয়তো তার বাবা প্রথমে চাননি আমার হাতে তার রাজকন্যাকে তুলে দিতে । রাজ্য থাকুক না থাকুক প্রতিটা বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকুমারী ।

বড়দের মুখের ওপর কথা বলিনা কখনও । কিন্তু আমি কেন জানিনা অনেক সাহস করে বলতে পেরেছিলাম শুভার বাবাকে । যে আমি শুভাকে অনেক ভালোবাসি । আর কিছু দিতে পারি না পারি । শুভার জন্য ভালোবাসার অভাব হবে না ।

শুভা আর আমার ছোট্ট সংসার । বিয়ের দু’ বছর হয়েছে ।  শুভার বাবাকে দেয়া কথাটা সারা জীবণ রাখবো এমন একটা প্রতিশ্রুতি আমি আমার মনকেও দিয়েছি । আমাদের ছোট্ট একটা বাবু সোনা আছে । শুভাই তার নাম রেখেছে । শুভ্রনীল শাওন । মাঝে মাঝে আমার ফ্রেন্ডরা শুভার সাথে মজা করে বলে বলে বৌদি এটা কি আপনার বাবুর নাম নাকি পুরো ফ্ল্যাটের বাবুদের নাম । শুভা তাদের সামনে শুধুই হাঁসে কিছুই বলে না । পরে আমাকে নালিশ করে দেখোনা ওরা আমাকে আমাদের বাবুর নাম নিয়ে একথা বলেছে । আমাদের বাবুর নামটা কি পঁচা ।

প্রথম বিবাহ বার্ষিকিতে শুভাকে নিয়ে কক্সবাজার গেছিলাম । তার নাকি খুব শখ সেখানে যাবার । আমিও আগে কখনও যায়নি । তাকে নিয়ে সমুদ্রে সারা দিন কাটিয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতেই বুঝতে পারলাম দু’জনের জ্বর এসেগেছে । তারপরও পরদিন আবার গেলাম আবারও সারাদিন সেখানে কাটালাম । তিনদিনের ট্যুর শেষ হলো আটদিনে ।

জামাই ষষ্ঠীতে সেবার প্রথম গেলাম । শুভা আমাকে অবাক করে যা কান্ড করেছিল । আমি তো শুধুই অবাক না । মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছিল রিতিমতো । খাবার খেতে বসেছিলাম আমি শুভা আর শ্বশুর মশাই । শ্বশুর মশাই অনেক শান্ত স্বভাবের লোক । তাই চুপচাপ ছিলেন কিন্তু সেটা কি শুভা হতে দিবে । খাবার গুলো খাওয়ানোর নামে আমার সারা গায়ে মাখালো । শ্বশুরের মুখের মুচকি হাসি টা আমাকে মুগ্ধ করেছিল । ওনার হাসিটা আমাদের ভালোবাসার প্রতি ওনার বিশ্বাসটা প্রকাশ করছিলো । সামান্য একটু কষ্ট আর শূন্যতা চোখ দুটোকে অসহায় করে তুলছিলো । শুভার মায়ের আভাব ।  ওনাকে শুধুই ছবিতে দেখেছি আমি । মন চাইছিল একটিবার যদি ওনাকে বলতে পারতাম । মা আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি ।

আজ শুভা আমার জন্য অনেক কিছু রান্না করছে এটা আমি ড্রইং রুম থেকে বুঝতে পারছি ।  খুব সকালে  রান্না ঘরে ঢুকেছে সে । আর আমি আপনাদের আমাদের ভালোবাসার গল্প শোনাচ্ছি । কিছুক্ষণ আগে আমার বাবু সোনাটা এসে আমাকে যখন বলল বাবা আজ নাকি তোমার জন্মদিন । তখন ডাইরটা আর পড়া লাগে নি । বুঝেছি  সব কিছুই ।

প্রতিটা ভালোবাসা খুঁজে পাক তার স্বার্থকতা  । প্রতিটা ভালোবাসা বেঁচে থাকুক অমর হয়ে ।



সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার


Comments

Popular posts from this blog

বউ আমার বস

মেয়েটি ছেলেটির বাইক দেখে প্রেমে পড়ল অতপর

যাযাবর আমি