ফাঁদে পড়ে বিয়ে


সকাল থেকে ফোনটা বার বার বাজছে ।ঘুমের কারনে ফোনটা রিসিভ আর করতে পারলাম না । ঘুম থেকে না উঠেও আর পারলাম না । কারণ রান্নাঘর থেকে মাও ফোনের রিংটোনের চেয়ে বেশি জোরে চিৎকার করছেন ফোনটা রিসিভ করার জন্য ।
ঘুম ঘুম চেখে দেখলাম নিলীমার মিস কল এসেছিল । আর সেটা মাত্র 13 টা । মাত্র বললাম কারণ  নিলীমা একবার কল দিতে থাকলে আর রিসিভ না করার আগ অবধি কল দিতে থাকে । হয় কল ব্যাক করতে হবে নয়তো ধরতে হবে । একবার ভুল করে ফোন বাড়ি রেখে ক্যাম্পাসে চলে গেছিলাম 123 টা কল দিছিল সে ।
আমার অনেক কাছের বান্ধবী সে । আমি স্বপ্নীল  । আমরা একসাথে পড়ি । ভাল বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোন কিছু নেই আমাদের ভিতর । তবে আমরা দিক থেকে শুধু বন্ধুত্ব কথাটা যেন মানায় না । আমি যেন তার মায়া জালে আটকা পড়ে আছি ।  আমারা একে অপরের জন্য অনেক কিছু করি আর করতেও পারি । এমনই মায়ার টান আমাদের ।
কিছুদিন আগে আমি আমাদের র্টাম পেপার সাবমিট করার ডেট ভুলে যাই ।  সে যখন জানতে পারে আমি সাবমিট করিনি । সে ইচ্ছা করে র্টাম পেপার জমা দেয় নি । আর স্যার আমাদের দু’জনকে অপমান করে বের করে দেয় । আমাদের তাতে কোন কষ্ট নাই আমরা বাইরে এসে ক্লাস অফ ক্লানে অ্যাটাক দেই । আবার আমার 3rd সেমিষ্টারে যখন বাসায় রেজাল্ট জানায়নি । তখন নিলীমাও জানায় নি । আরও কত কি । নিলীমা একবার অসুস্থ ছিল । আমি দু’দিন বাড়ি যাইনি হাসপাতালে তার পাশে ছিলাম ।
সেসব কথা থাক । নিলীমাকে ফোন দিলাম । কল ধরেই বলল জলদি আমার বাসায় আসবি । এক ঘন্টার ভিতর খুব ভালোভাবে সেজে আমার বাসায় হাজির দেখতে চাই ।
আমি মজা করে বললাম কেন তোর বিয়ে নাকি । সে একটু গম্ভীর ভাবে বলল হ্যাঁ । আমি বুঝতে পারলাম না । আর কোনকিছু শুনবো, তার আগেই কল কেটে দিল । আর কল ঢুকলো না তার ফোনে । আমি নাস্তা সেরে বেশ পার্টি লুকের মতো করে পরিপাটি ভাবে গুছিয়ে । মাকে নিলীমাদের বাসায় যাচ্ছি বলে বাসা থেকে বের হলাম ।
বাসা থেকে বের হতেই এক ঘন্টা লেগে গেল । তারপর বাইকটাকে দ্রুত চালিয়ে নিলীমাদের বাসায় পৌছেই অবাক । দেখি বাড়ি ভর্তি লোকজন । ভাবছি সত্যি সত্যি তার বিয়ে নাকি । ভাবতে ভাবতেই নিলীমা আমার সামনে এসে হাজির । হাতটা ধরে ভেতরে নিয়ে গেল । ভেতরে তার বান্ধবীদের বের করে দিয়ে ।  তার বেড রুমে আমাকে নিয়ে দরজাটা আটকে দিল ।
আমি একটু একটু ভয়  পেতে শুরু করলাম । কি ব্যাপার কি হইছে ? নিলীমা আমাকে সোফায় বসিয়ে নিজে দাড়িয়ে থাকল । প্রথমে একটু জল খেল আর বাকিটা আমাকে খেতে বলল । আমার ওর হাব ভাব ভালো মনে হচ্ছিল না । আমি বলেই ফেললাম এতে বিষ নাই তো ? নিলীমা তখন সিরিয়াস কেন জানি না কিছুতেই নরমাল হতে পারছে না । আমার দিকে তাকাচ্ছে আর পায়চারি করছে । হঠাৎ নিলীমা আমার পায়ের কাছে বসে পড়ল । আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে গেলাম । তার চোখে জল ছলছল করছে । আমি এক গোলক ধাধায় পড়ে গেলাম ।
তাকে তুলে উপরে বসিয়ে বললাম সব খুলে বল । কি হয়েছে ? আমি তো আছি ।
নিলীমা যা যা বলল তা আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নিলীমা নাকি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ।
কথাটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা । আমি অকপটে জানতে চাইলাম কি ভাবে কি ? এসব হলো কি ভাবে । সে যা বলল তা আরও ভয়ানয় । আমাদের কলেজের এক ছেলে তার নাম শুভ । তার সাথে নিলীমার সর্ম্পক ছিল । আমি বললাম শুভর তো অন্য মেয়ের সাথে সর্ম্পক আছে । আর সে তো খুব বাজে ছেলে । এমন কোন বাজে কাজ নাই যা সে করে না । তুই এটা জনতি না ?
নিলীমা এবার কেঁদে ফেলল । আমি জানতাম কিন্তু কি দিয়ে কি করে জানি আমি শুভকে ভালবেসে ফেলি । আর একদিন তার জ্বর হয়েছে বলে আমাকে তার ফ্লাটে নিয়ে যায় । তারপর আর কি বলব তুই নিশ্চয় বুঝতে পারছিস ।
তো শুভকে সব খুলে বল । আমি ( নিলীমা )বলেছিলাম কিন্তু সে ( শুভ ) মানতে নারাজ । আর সে বলেছে  বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে । আর এসব কথা বাইরে বললে আমাকে মেরে দেবে আর আমার ভিডিও নেটে ছেড়ে দেবে ।
তোর বাড়িতে এতো লোকজন কেন ? আমার (নিলীমা )প্রেগনেন্সির কথা সব জানাজানি হবার আগে আমাকে বলেছে এই সন্তানের বাবার সাথে আমার বিয়ে দেবে । তাই হঠাৎ আজ আমার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে । আর আমাকে বলেছে যে দুপুরের ভিতর যেন এই সন্তানের বাবাকে আমাদের বাড়ি হাজির করা হয় ।  এদিকে আমি যদি শুভর কথা বলি তাহলে তো সব শেষ । তার চাইতে আমার মরে যাওয়া ভাল । আমি চারদিকে যখন অন্ধকার দেখছিলাম তখন তুই শুধু আলোর মত আমার মনের আকাশে জ্বলছিলি ।
আমাকে তুই বাঁচা । আমার বাবা আর পরিবারের সন্মান এখন তোর হাতে । আমি কি করব বল । আমি কি শুভকে বুঝিয়ে তাইলে নিয়ে আসবো । না না । তুই আমাকে (নিলীমা ) বিয়ে করে নে না দয়া করে । তোর পায়ে ধরি।
আমি সারা জীবন তো দাসী হয়ে কাটিয়ে দেব । তুই চাইলে অন্য কাউকে বিয়ে করিস কিন্তু আজকের মত আমাকে তোর বউ করে ঘরে নিয়ে চল ।  নইলে আমার আর আমার পরিবার আজই ধবংস হয়ে যাবে ।
নিলীমার কথায় কিন্তু  আমিও যেন চারদিকে অন্ধকার দেখছি । আমি ভেবে কোন কুল খুঁজে পাচ্ছি না । জানি না আমার মা এটা মেনে নেবেন কিনা । আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম । বসে ভাবছি । এর ভেতর দরজার ওপাশ থেকে নিলীমার মা-বাবা একসাথে ডাকাডাকি শুরু করলেন ।
নিলীমা বলল আমার সামনে দুইটা পথ আছে । হয় আমাকে বিয়ে কর । না হলে এখনই বাড়ি চলে যা  আমি এখনই বিষ খাবো । তার হাতে থাকা বিষের বোতলটা কেঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম । সে পরম আত্নবিশ্বাসে আমাকে জড়িয়ে ধরে মনের সুখে কাঁদছে ।
কয়েক সেকেন্ডে তার চেহারা খানা যেন আমাবশ্যা থেকে পূর্ণিমাতে ভরে গেল । আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেল । সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । আমি চুপ রইলাম । শুধু নিলীমার মুখটার হাসিটা দেখছিলাম । আর ভাবছিলাম এক ঘন্টা আগেও যা ভাবতেই পারিনি এখন তাই হতে চলেছে ।
বিয়েটা হয়ে গেল । আমি তাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরলাম । সাথে নিলীমার অনেক আত্নীয় আসলো । দরজার কলিং বেলটা কয়েকবার বাজাতেই মা খুনতি হাতে রান্না ঘর থেকে সরাসরি চলে আসলেন। দরজা খুলেই তিনিও অবাক । মাকে অনেক কষ্টে পঁনের মিনিট ধরে বিষয়টা বোঝাতে পারলাম । নিলীমার মুখের দিকে চেয়ে মাও সব মেনে নিলেন ।
এখন আমরা ভালই আছি । গত মাসে ক্রস ফায়ারে শুভ মারা গেছে । তার নামে অনেক মামলা ছিল। আমাদের মনের অন্যতম একটা ভয় চলে গেছে । আর আমরা একসাথে আছি । দিনদিন যেন আমাদের ভালোবাসাটা বেড়েই চলেছে ।

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার


Comments

Popular posts from this blog

বউ আমার বস

মেয়েটি ছেলেটির বাইক দেখে প্রেমে পড়ল অতপর

যাযাবর আমি