প্রেমিকা তুমি আজ পতিতাঃ
আজ আকরাম সাহেবের মনটা খুব খারাপ। আজ আকরাম সাহেবের সাথে
তার বউয়ের ডির্ভোস হয়ে গেল। আকরাম সাহেব বউকে অনেক ভালোবাসতেন । কখন কোন অভিযোগ করার
সুযোগ দিতেন না । মা কোন নালিশ করলেও বউকে কিছু বলতেন না । দু’জনকে অনেক ভালোবাসতেন
। কেন জানি আকরাম সাহেবের স্ত্রী তার ভালোবাসাকে
র্দুবলতা ভেবে । তাকে ফাঁকি দিয়ে অন্যের হাত
ধরে আজ ভালোবাসার জালছিড়ে চলে গেল । যাবার সময় একটিবারও ফিরে দেখলো না যদি একবারও ফিরে
দেখত সে দেখতে পেত তার স্বামীর কান্না । আদালত থেকে বাড়ি ফিরে অনেক সময় ধরে দরজা আটকে
বসে ছিল । হঠাৎ তার বনধুর ডাকাডাকিতে দরজা খুলে বাইরে আসলো । সরাসরি বাথরুমে গেল ভালোভাবে
গোসল করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে গেল । আগে কোনদিন মদ খাননি তিনি । তবে আজ খুব করে খেলেন
। দিল খুস হয়ে গেল । এতক্ষন বারে চলা গানটা গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করলেন আর হেলে দুলে
চলছেন । কখনও রাস্তার বামে কখনও ডানে ।
কিছুক্ষন থেমে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন । টাকা গুনলেন
প্রায় পনের হাজার । পকেটে আবার মানিব্যাগটা রাখলেন । তারপর চললেন পাশের অন্ধকার গলি
ধরে। সেই নিষিদ্ধ পল্লিতে, কয়েক মিটার এগোতেই এক লোক এসে তাকে বলতে থাকলেন ঃ আসুন বাবু
নতুন আছে, তাঁজা আছে, কচি একদম , পানির দরে পাবেন। ডাঁশা মাল একদম । আরো না জানি কত
বাঁজে কথা বের হচ্ছিল তার মুখ থেকে । এই লোকটি আসলে দালাল । আকরাম সাহেব এগিয়ে চলেছেন
মাঝে মাঝে পড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে পাশের দালাল তাকে সামলে দিচ্ছে । একটু পর এসে গেলেন
কেন জানি ভেতরে ঢুকতে মন চাইছে না । তারপরও রাগ আর অভিমানে ভেতরে ঢুকলেন । ভেতরে কেমন
জানি ভেপসা গরম ছোট ছোট ঘর । এমনই একটা ছোট ঘরে একটা মেয়ে তাকে টেনে নিয়ে গেল । ঘরটা
বেশ সাজানো গোছানো ।
মেয়েটা তাকে কিছু কথা বলল যার অধিকাংশ তার বোধগম্য হলো
না । তারপর মেয়েটা নিজের কাপড় খুলতে শুরু করলে আকরাম সাহেব দাঁড়ালেন আর তাকে থামাতে
যাবেন ভেবে পা বাড়ালেন । আর তখনই ঘরের মেঝেতে
কিছু একটার সাথে বেধে গিয়ে মেয়েটির গায়ের উপর পড়লেন । মেয়েটি না বুঝে কিছু গালি দিল।
আকরাম সাহেব কিছু বললেন না । নিজেকে সামলে নিয়ে তেমে তেমে বললেন, তুমি একরাতের জন্য
কত টাকা পাউ ? মেয়েটা সাবলিল ভাবে বলে ফেলল পাঁচশ । আকরাম সাহেব অগোছালো ভাবে বললেন
তোমর কিছু করতে হবে না শুধু আমার সাথে সারারাত গল্প করবে আর আমি তোমাকে যা চাও তাই
দিয়ে যাব । চাইলে এখনি নিয়ে নিতে পারো । মেয়েটি ভাবলো সালা পাগল নাকি ? প্রতিদিন খদ্দেরের
সাথে ঝগড়া করেও টাকা পাইনা আর শুধু গল্প করে টাকা দিবে । রাত অনেক হয়েছে এখন আর এমনিতে
খদ্দের পাওয়া যাবে না আর তারপরও তার চোখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে শেষে রাজি হলো
।
তবে বিপত্তি ঘটলো অন্যখানে যখন আকরাম সাহেব বললেন আমার
গল্প নয় তুমি তোমার গল্প বলো । মেয়েটা প্রথমে রাজি হচ্ছিল না । পরে আকরাম সাহেবে বলল
যখন তাইলে আমি আসি আমার কোন কাজ নেই এখানে তখন রাজি হলো । বলল সাহেব আমার মত খারাপ
মেয়ের জীবন কাহিনী কেউ শুনতে চাইনা । চাইবেই বা কেন ? সবাই আসে আমার দেহটাকে উপভোগ
করতে আসে আর চলে যায় । আপনিই প্রথম এই কথা বললেন তো তাই বেশ অবাক হলাম ।
এবার মেয়েটি বলতে শুরু করল সাহেব সখের বশে কেউ এখানে আসে
না । আমরা যারা এখানে আছি সবার জীবন এক একটা জীবন্ত গল্প । আমার নাম তানিয়া । আমি রিফাতকে খুব ভালোবাসতাম রিফাত আমাকে ভালবাসে কিনা এটা শুধু রিফাত জানে।আমি কখনও জানতে চাইনি
।
জানেন সাহেব প্রেম এবং ভালোবাসা দুটো আলাদা জিনিস। মাঝে মাঝে অনেকে সেটা গুলিয়ে ফেলে । কিন্তু প্রকৃতি সে তার নিজের নিয়মে চলতে থাকে । সেখানে ভুলের কোন ক্ষমা নেই । বলতে
আপত্তি নেই আজ প্রায় ছয় বছর আগে আমাদের ভালোবাসা নামক প্রেমের এর মাঝে আমি শতবার রিফাতকে বলেছিল যে বাড়ি থেকে চাপা দিচ্ছে বিয়ের জন্য তুমি বাড়িতে জানাও আমাদের কথা। আর কতদিন এভাবে চলবে ? রিফাত কিছু বলত না । রিফাত কিছু একটা বুঝিয়ে চুপ করিয়ে দিত। এভাবে চলতে থাকে আমাদের ভালোবাসা আর মেলামেশা । হাজার হোক মানুষ তো দেহ তার দেহী টাকে টানবে এটাই স্বাভাবিক। আর এভাবে রিফাত আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা আমি প্রথম দিকে বাধা দিতাম বিয়ের আগে এইসব ঠিক না । আমরা বিয়ে করে ফেলি চলো । আমার এই কথা রিফাতের কানে ঢুকতোই না। বারবার আমাকে বলতো তুমি চিন্তা করো না কোন সমস্যা নেই । এর পরে ও আমি না শুনতে চাইলে ছেড়ে চলে যাবার ভয় দেখাতো। আর তাই প্রেমিক মানুষরূপী দেহলোভী রিফাত কে হারাতে চায়নি। যদিও ভালোবাসায় এতোটা
অন্ধছিলাম যে তাকে চিনতে পারিনি ।
আমার যেদিন প্রথম বমি হলো আমার ভাবি আমার কাছে এসে সব কথা
জোর করে জানলেন । আর আমার ভাইয়াকে জানালেন ।সেদিন আমার বাবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল
। আমার বাবা আমকে খুব ভালোবাসতেন আমার মা নেই । বাবা আমাকে ছোট বেলা থেকে মা আর বাবার
দু’’জনের আদর আর স্নেহে মানুষ করেছিলেন । সেই বাবা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন
। ভাবি যদিও সবার আড়ালে একটু কথা বলতেন বাবা আর ভাইয়া আসলে চুপ হয়ে যেতেন । আমার অনেক
বান্ধবী ছিল সবাই আশা বন্ধ করে দিলো আসলে তাদের বাড়ি থেকে আসতে দিত না । আমার বাবা
প্রায় এক সপ্তাহ পর আমার কাছে জানতে চাইলেন এটা কার সন্তান । আমি ভয়ে ভয়ে রিফাতের নাম
বলেছিলাম । রিফাতের বাড়িতে বাবা গেলে তারা বাবার আর চাচার কোন কথা না শুনে তাদের বের
করে দেন আরো পুলিশের ভয় দেখান ।
আমি অনেক কষ্টে রিফাতের সাথে দেখা করি । রিফাত যেন আমাকে
চিনতে পারেনি । আমার পেটের সন্তানকে অস্বীকার
করে আর আমার চুল ধরে বৈশ মেরে আমাকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় । তার মাও আমাকে অনেক
মারে । আমি কোন রকমে রাস্তায় এসে একটা ভ্যানে বাড়ি আসি । তারপর কিছুদিন পর থেকে সবাই
আরো অত্যাচার শুরু করল । আমি নিজের অপরাধ বোধ থেকে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসি । আর এই শহরে
আমার পরিচিত কেউ ছিলনা । কেউ কাজেও নিতে চাইছিল না । খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল । হঠাৎ
একদিন পেটে প্রচুর ব্যথা করছির আর পা বেঁয়ে রক্ত পড়ছিল । আমি ভয় পেয়ে যায় । বাঁচার
ইচ্ছা যদিও ছিল না । তবুও কেন জানিনা মৃত্যু ভয়কে সেদিন জয় করতে পাছিলাম না । চারদিকে
অন্ধকার দেখছিলাম । এভাবে কখন বেহুশ হয়ে যাই মনে নেই । য়খন হুশ ফেরে দেখি আমি একটা
ছোট্ট ঘরে । আমার পাশে চার-পাঁচজন মহিলা । তারা বেশ সেজে আছে কিন্তু তাদের সাজটা কেন
জানি একটু কেমন লাগছিল ।
পরে জানতে পারি আমার একটা মেয়ে সন্তান হয়েছিল কিন্তু মৃত
। আমার শরীর একটু সুস্থ হতেই আমাকে একজন বলে কোথায় যাবি ? বাড়ি কোথায় তোর ? নাম কি
? তখন আমার বলতে এই পৃথিবীর আর কেউ আমার মনে হচ্ছিল না । আমার আর কোন নাম নেই পরিচয়
নেই । আমি তাকে পায়ে ধরে বলি আপাগো আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নাই । আমার কোন ঘর
নাই । আমারে তুমি একটা কাজ দাও আপা । আমি এখানে থাকতে চাই । শুধু দুই বেলা দুইডা ভাত খাইতে দিও । আমাকে যা করতে বলবা আমি
সব করে দিব । আমাকে রহিমা আপা বলে আরে না না । তোর ঠিকানা বল তোর বাড়ি যাবার ব্যবস্থা
করি । এখনে কোন মানুষ থাকে না । যারা থাকে “হয় তারা খাবার, নয়তো খাদক” । আমি তা কথা
বুঝতে পারিনি । পরদিন সকালে যখন রহিমা আপা আমাকে সব খুলে বলে আমি তখন প্রথম জানতে পারি
যে আমি পতিতালয়ে আছি । আর নিজের মনের কাছে
প্রশ্ন করি আমি কি পতিতা নই ? আমারও তো অবৈধ সর্ম্পক ছিল রিফাতের সাথে । সেটা হয়তো
টাকার বিনিময়ে নয়, তবে সেটাতো ভালোবাসার বিনিময়ে । যাই হোক কিছু বিনিময় তো সেখানে ছিল
। তারপর সেই থেকে আর কোথাও যাইনি । এখানেই আছি ।
আকরাম সাহেব সেই থেকে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে
আছে । মেয়েটা কথাগুলো শেষ করেই হুহু করে কেঁদে উঠল । আকরাম সাহেব সেদিন মনে মনে ভাবছেন
। আমার দুঃখ তো এই মেয়েটার দুঃখের কাছে কিছুই না । আজ তারও চোখের কোনায় দু’ ফোটা জল
চিক চিক করছে । অকরাম সাহেব নিজেকে সামলাতে না পেরে মানিব্যাগটা ধরেই তাকে দিয়ে চলে
আসলেন ।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার
Comments
Post a Comment