আমার ভালোবাসার তন্দ্রা
বিস্ময়কর এই পৃথিবীর খেলাঘরে আমি এক ক্লান্ত সৈনিক । আজ ক্লান্তি আমাকে ঘিরে ধরেছে চারিদিকে । নিজেকে অসহায় লাগছে । আর যেন নিঃশ্ব । চারপাশের অন্ধকারটা আজ এতটা কালো যে নিজেকে খুজে পাচ্ছি না । আমি বলতে আমার এই নির্জীব দেহটা ছাড়া আর তেমন কিছুই নাই । আমার সব আজ যাকে দিয়ে আমি নিঃশ্ব সে তো আজ অন্য কারো। তাই শশ্মানের ঘাটে বসে আছি । এটা আমার খুব প্রিয় জায়গা । ছোট বেলায় আমার মন খারাপ হলেই এখানে চলে আসতাম । এখানে কেউ কাউকে বিরক্ত করে না । কি করে করবে যারা আসতো সবাই তো মরা নিয়ে আসতো । আমিই একমাত্র যে কোন কারণ ছাড়া এখানে আসি । আমার বন্ধুরা অনেকে দিনের বেলাতেও এখানে আসতে চাই না । কিন্তু আমি এখানে রাতও কাটিয়েছি ।এখানে আসলেই মনটা ভারেঅ হয়ে যায় ।
আজও আমার মন ভালো নেই । তাইতো কানে হেড ফোন দিয়ে মিনারের গানটা শুনছি আর নিজের সাথে মিল খুজছিঃ
আজও আমার মন ভালো নেই । তাইতো কানে হেড ফোন দিয়ে মিনারের গানটা শুনছি আর নিজের সাথে মিল খুজছিঃ
আমি যেন আজ দিক ভ্রান্ত,
ভাবনারা কেন খুব ক্লান্ত, যানি না ।
কি করি ? কোথায় যায় ? উত্তর খুজে না পাই ,
ছোয়া যাবে না জেনেও হাতটা বাড়ায় ...................
ভাবনারা কেন খুব ক্লান্ত, যানি না ।
কি করি ? কোথায় যায় ? উত্তর খুজে না পাই ,
ছোয়া যাবে না জেনেও হাতটা বাড়ায় ...................
হঠাৎ মানুষের কথায় গান শোনায় ব্যাঘাৎ ঘটলো । রাত বারোটা পনের এতা রাতে সাধারণত মানুষ এদিকে আসে না । কান থেকে হেডফোন রেখে তাদের কথা শুনতে থাকলাম । তাদের কথায় বুঝলাম তারা মা লাশ নিয়ে এসেছে । তাদের কাছে গেলাম । জানতে চাইলাম এতরাতে মরা নিয়ে এখানে কেন ? তারা বলল মেয়েটা ভালোবাসতো একটা ছেলেকে । ছেলেটি অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে তাই সে বিষ খেয়েছে । আজ মর্গ থেকে দিয়ে গেছে সকালে । পচন ধরেছে তাই রাতেই নিয়ে আসতে হলো । সাথে তেমন লোক নাই । তাই আমি যেন গায়ে পড়ে সাহায্য করলাম । আসলে মন ভালো করতে হলে কাজে ডুবে যাও আমার এক স্যার বলতেন । তাই করছি । সব ব্যবস্থা হতে প্রায় রাত আড়াইটা বাজলো । সকাল হয়ে যাবে দাহ শেষ হতে । সবার চোখে জল । আমি আবার ঘাটে এসে বসলাম । আমার সম-বয়সি একটা ছেলে এসে পাশে বসল ।
বলল ভাই দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে কিন্তু এত রাতে এখানে কেন ? আমি কিছু বলতে চাইছিলাম না । কিন্তু তার পিড়াপিড়িতে শেষমেষ বলতেই হলো । সে বলল ভাই প্রথম থেকে বলেন । আমি একটু অবাক হলাম হঠাৎ তার এত আগ্রহ দেখে । তাও বলতে শুরু করলাম ।
আমার প্রিয় মানুষটার নাম তন্দ্রা । তন্দ্রা মানে বাংলা সহজ কথায় ঘুম । তন্দ্রা নামটা শুনলে অনেকের ঘুম ঘুম ভাব আসলেও আমার তন্দ্রা অর্থাৎ ঘুম ভাব কেটে যেত । শুধু কেটেই যেত না বারোটা বেজে যেত ঘুমের । সারারাত তার কথা ভাবতাম । তার সাথে কি কি কথা বলব কোথায় কোথায় যাবো এসব ভেবে রাত কেটে যেত । আমার বাইকটা তখনও ঘাটের ওপর ছিল , তাকে দেখেয়ে বললাম । এই বাইকে তাকে নিয়ে কতো ঘুরেছি । তা বলে শেষ করতে পারবো না । তার নিশ্বাস যখন আমার কাঁধে পড়ত । আমার সেটা সুশীতল বাতাস লাগলেও সেটা যে বিষে ভরা হয়তো জানতাম বা হয়তো জানতাম না ।
আজ মন চাইছে যেন এখানে দাড়িয়ে গলাছেড়ে গাই ঃ
তোমার ঐ নিঃশ্বাসে বিষ ছিল আমি জানিতাম,
জানিতাম কি তার শেষ পরিনাম ।
তবু জেনেশুনে তোমাকেই ভালোবাসলাম ।।
জানিতাম কি তার শেষ পরিনাম ।
তবু জেনেশুনে তোমাকেই ভালোবাসলাম ।।
তন্দ্রার সাথে আমার পরিচয় কলেজে । কলেজের প্রথমদিনটা খুব মনে পড়ে। প্রথম ক্লাসে পাশাপাশি বসেছিল সেদিন । ভেবেছিলাম হয়তো এভাবে বাকিটা জীবন কেটে যাবে । প্রথম দেখায় প্রেম বুঝলে ? না সেটা যে হবার নয় তা স্বপ্নেও ভাবিনি । তার চোখ দেখে সেদিন বারবার ঐ চোখের মনির ভেতর নিজেকে দেখার ইচ্ছা করছিল । আজ আমার চোখে সে আছে অথচ তার চোখে অন্য কেউ । তাকে প্রথম কলেজে দেখেছিলাম তার পর থেকে একসাথে কলেজ আর প্রাইভেট সহ ঘোরাফেরা করতে করতে কখন জানিনা বনধুত্বটা ভালোলাগা আর সবশেষে ভালোবাসায় পরিনত হলো ।
স্কুল লাইফে বয়েজ স্কুলে পড়ার কারনে কোন মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠেনি । কিন্তু কলেজ লাইফে সেটা আর নেই । অবশ্য আমার স্কুলের বন্ধুদের মুখে প্রায়ই শুনতাম তাদের ভালোবাসার কথা । বেশ মজা লাগত । আজ চার বছর আমরা একসাথে খুব মিলেমিশে আছি । আছি না আসলে ছিলাম । আমাদের বন্ধুত্ব এতটা ভালোছিল যে সে প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতো আমিও যেতাম । আমাদের পরিবার আর তন্দ্রার পরিবারের মধ্যে বেশ ভালো একটা সর্ম্পক গড়ে ওঠে । আমার মা তন্দ্রাকে খুব ভালোবাসতো । তন্দ্রার মাও আমাকে খুব আদর করতেন । আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে দু’ই পরিবার একসাথে যেতাম । আমার মা তো একদিন তন্দ্রার মাকে বলেই ফেললেন যেন আমদের দু’ জনের চার হাত এক করে দিতে । তন্দ্রার মা সেই থেকে আমার মাকে বিয়ান বলে ডাকেন । তবে সবার সামনে না ।
সবই চলছিল ঠিকঠাক । গত ছয় সাত মাস তার ভেতর বেশ পরিবর্তন দেখছিলাম । মাঝে মাঝে তার ফোন বন্ধ থাকা । তার ছোট ছোট মিথ্যা বলাগুলো তেমন সিরিয়াস নিতাম না । কখনও সাহস করে আমি তাকে বলতে পারিনি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি । তবে তাকে বোঝানো চেষ্টা করতাম খুব । যেন আমার আচরন আর কথায় যেন বুঝতে পারে আমি তাকে ভালোবাসি । আমার কথাগুলো সে হাসিতে উড়িয়ে দিতো । কি জানি বুঝতো কিনা । সে বুঝুক না বুঝুক এলাকার বাচ্চা থেকে বড় সবাই কেমন করে যানি জেনে গেছিল সব । আমার এলাকার ছোট ভাইরা তাকে অনেক সন্মান করা ধরল । যারা আগে তার পিছে লাইন মারার চিন্তা করত তারা এখন তো মুখ তুলেও তাকায় না ।
আমাকে রিফাত নামে আমাদের এলাকার এক ছোট ভাই জানালো ভাইয়া আজ দেখলাম তন্দ্রা ভাবী পার্কে কারো সাথে বসে আছে । আমি ধমক দিয়ে তাকে বললাম কি বলিস এসব । সে বলে আপনি ফোন দিয়ে দেখেন । আমি ফোন দিলাম সে ফোন ধরল না । আমার কেমন জানি লাগল । তার বাসায় ফোন দিলাম আন্টি বলল কেন বাবা সে তো তোমাদের বাসায় গেল । আবার তন্দ্রাকে ফোন দিলাম সে বলল, সে নাকি তাদের বাসায় । আমি কিছু বললাম না । সব বুঝেও না বুঝার ভান করলাম । পরদিন কলেজে ক্যাম্পাসে তন্দ্রাকে বললাম কাল কোথায় ছিলে তোমার মা বললেন তুমি নাকি আমাদের বাসায় আসবে বলে বের হয়েছিলে ? সে কথাটা এড়িয়ে গেল ।
তার অভিমানি মুখটা আমাকে বড় কষ্ট দেয় । তাই তাকে আর কিছু বললাম না । তাকে ভালোবাসার আগে আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতেও যেন কেমন দ্বিধা বোধ করতাম । আজকাল সব তেমন নেই । অনেক পরিবর্তন এসেছে আমার মধ্যে । তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারলাম কলেজের অনেক ছেলে সাথেই তার ভালো রিলেসন আছে । এমনকি সে নাকি ছোট বেলা থেকে এমনই এক এক সময় এক এক ছেলেকে নিয়ে খেলা করে আর তার খেলার ময়দান হলো স্কুল, কলেজ, রেষ্টুরেন্ট, কফি-শপ ।
তার অভিমানি মুখটা আমাকে বড় কষ্ট দেয় । তাই তাকে আর কিছু বললাম না । তাকে ভালোবাসার আগে আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতেও যেন কেমন দ্বিধা বোধ করতাম । আজকাল সব তেমন নেই । অনেক পরিবর্তন এসেছে আমার মধ্যে । তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারলাম কলেজের অনেক ছেলে সাথেই তার ভালো রিলেসন আছে । এমনকি সে নাকি ছোট বেলা থেকে এমনই এক এক সময় এক এক ছেলেকে নিয়ে খেলা করে আর তার খেলার ময়দান হলো স্কুল, কলেজ, রেষ্টুরেন্ট, কফি-শপ ।
কথাগুলি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । তারপরও কোথায় জানি একটা কষ্ট হচ্ছিল । সেটা কাউকে বুঝতে দিতে চাইছিলাম না । সব থেকে সরে আসতে চাইছিলাম । কিন্তু এতো দিনের তিলে তিলে গড়া সর্ম্পকটা এতো সহজে কিভাবে ছিড়ব বুঝতে পারছিলাম না ।
মাকে জানালাম । মা তনুর পরিবারকে আমাদের এঙ্গেজমেন্টের কথা বললেন । সবাই রাজি হলেও তনু সরাসরি না করে দিল ।
সে এটাও বলল আমি নাকি শুধুই তার ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না । আর কিছু বলার নাই । তাকে বলেছিলাম বনধু কি ভালোবাসা হতে পারে না । সে অনেক গুলো কড়া কথা বলল । আমার মনে হচ্ছিল এর থেকে সে যদি আমাকে বলত তুমি মরে যাও তাও ভালো ছিল । এও বলল সে একটা ছেলেকে ভালোবাসে । তাদের ভালোবাসা অনেক আগে থেকে চলছে । আমি সেটা জানতাম না । আর এ]খন যেনেই বা কি লাভ । সে এক ধনীর ছেলে বিরাট ব্যাবসায়ী । আর আমি কোথাকার কে ? তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তন্দ্রার নিত্য যাতায়াত ছিল । আমি জানতাম কিন্তু কখনও জানতেও পারিনি সে আসলে তার ভালবাসা । এখন এই মনটাকে একটাই স্বান্তনা দেই যে আমি কখনও তার ছিলাম না । তাই তার প্রতি আমার কোন অভিযোগ থাকার কথা না । আর যেহেতু সে আমার তাই আমি তাকে কিছুই বলতে পারি না ।
মাকে জানালাম । মা তনুর পরিবারকে আমাদের এঙ্গেজমেন্টের কথা বললেন । সবাই রাজি হলেও তনু সরাসরি না করে দিল ।
সে এটাও বলল আমি নাকি শুধুই তার ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না । আর কিছু বলার নাই । তাকে বলেছিলাম বনধু কি ভালোবাসা হতে পারে না । সে অনেক গুলো কড়া কথা বলল । আমার মনে হচ্ছিল এর থেকে সে যদি আমাকে বলত তুমি মরে যাও তাও ভালো ছিল । এও বলল সে একটা ছেলেকে ভালোবাসে । তাদের ভালোবাসা অনেক আগে থেকে চলছে । আমি সেটা জানতাম না । আর এ]খন যেনেই বা কি লাভ । সে এক ধনীর ছেলে বিরাট ব্যাবসায়ী । আর আমি কোথাকার কে ? তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তন্দ্রার নিত্য যাতায়াত ছিল । আমি জানতাম কিন্তু কখনও জানতেও পারিনি সে আসলে তার ভালবাসা । এখন এই মনটাকে একটাই স্বান্তনা দেই যে আমি কখনও তার ছিলাম না । তাই তার প্রতি আমার কোন অভিযোগ থাকার কথা না । আর যেহেতু সে আমার তাই আমি তাকে কিছুই বলতে পারি না ।
কপালে ভালোবাসা না থাকলে কিছু করার থাকে না । আজ তাই সেই পুরানো শশ্মানের ঘাটে বসেই গান গাচ্ছি ঃ
সবাই তো সুখি হতে চাই , সবাইতো সুখি হতে চাই ,
তবু কেউ সুখি হয় কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা , জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না ।
সবাই তো সুখি হতে চাই , সবাইতো সুখি হতে চাই ।।
তবু কেউ সুখি হয় কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা , জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না ।
সবাই তো সুখি হতে চাই , সবাইতো সুখি হতে চাই ।।
গানটা সবার মনে ধরল সবাই আমার পাশে এসে বসল । গানটা আবার গাওয়ার অনুরোধ করল অনেকে । সবাইকে খুশি করতে তাই আবার চেষ্টা চলাচ্ছি ........................
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার
Comments
Post a Comment