রিয়াকে ফিরে পাওয়া


রিয়ার প্রতি ঘৃণাটা দিন দিন বাড়ছে । আর সেই সাথে বাড়ছে নেশার সাথে সখ্যতা । পৃথিবীতে একজন যত দূরে ঠেলে দেয়, তখন কেউ না কেউ ততোটাই আপন  করে নেই । যে ছেলে টা কখনও সিগারেট খেত না । অন্য কোন নেশা তো না ই । আর রাস্তায় মাথা নিচু করে চলতো । মেয়েদের সন্মান করতো । অসহায় কে সাহায্য করতো । সে আজ পুরোটাই পাল্টে গেছে ।
এখন সে মদ খায় । রাস্তায় মাতলামি করে । সেদিন যখন রাস্তায় একটা মেয়ে তাকে মাতাল বলে সে মেয়েটাকে গালি দেয় । মেয়েটা তাকে বেশি কথা বলতে শুরু করতেই ,  সে মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস করে চড় মেরে দেই । মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে তার হাতটা একটুও কাঁপেনি । অথচ তার এই হাত রিয়ার হাতটা ধরতে ও কাঁপতো । চারপাশে লোকজন তাকে এসে মারলো কিন্তু সে হাঁসছিলো । পরে অনেকে পাগল ভেবে ছেড়ে দেয় ।

সেদিন যখন মদ কেনার মতো  পকেটে টাকা ছিলোনা । রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করতে থাকা মহিলার ভিক্ষার পাত্র থেকে সব টাকা কেড়ে নেই সে  । সে মহিলার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে দেখে তার মায়া হয়নি । ফিরেও দেখেনি দ্বিতীয় বার । মহিলা তাকে কিছুই বলেনি । শুধুই চাপা স্বরে কেঁদেছে । কারণ শুভ্রই এক সময় ভিখারী মহিলাকে প্রতিদিন ভিক্ষা দিতো , খাবার দিতো , পূঁজাতে নতুন কাপড় দিতো । আজ সে তার ভিক্ষার থালাটা নিয়ে গেছে । তা নিয়ে মহিলার কোন কষ্ট নেই । শুধু একটাই কষ্ট ভালো সেই ছেলেটা আর আগের মতো নেই ।

মানুষের পাল্টাতে যে এতো কম সময় লাগে এটা সে নিজে ও জানতো না । রিয়ার জন্য দিনের পর দিন সে নষ্ট করেছে । রিয়ার ভাইয়ের চিকিৎসা করানো । তাকে বিদেশে পাঠানো । তাদের পরিবারের দেখা-শোনা করতে করতে নিজের পরিবারকে যেন হারিয়ে ফেলেছে । শুভ্রর বাবা যে অসুস্থ , নিজের ভাইয়ের পরীক্ষা চলছে । মায়ের বয়স হয়েছে । সংসার সামলানো , বাজার করা , ওষুধ কেনা । বিল দেয়া আর পরিবারকে সময় দেয়া এগুলো সবই শুভ্র ভুলে গেছে । পরিবারের বড় ছেলের সব দায়িত্ব পালন করা ছেলেটা রিয়ার প্রেমে পড়ে নিজের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে রিয়াকে । শুধু মাত্র তার ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে দেখতে । তার মুথে হাঁসি ফোটোতে ।

রিয়া আর শুভ্র যখন একসাথে পড়তো । পরীক্ষার ভিতর যখন রিয়া রাত জেগে পড়ছে । তখন শুভ্র অনলাইনে রিয়ার ভাইয়ের বিদেশে চিকিৎসার জন্য ভিসা প্রসেস আর ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট এর জন্য রাত জাগতো ।  রিয়ার পরিবারের চারজন লোককে খুব নিজের ভাবতো শুভ্র । পরিবারটাও কিনা শেষে ছলনা করলো ।

রিয়া আর শুভ্রর প্রেম কাহিনী কলেজ ক্যাম্পাসে আর আশেপাশে সবাই জানতো । আর তাদের ব্রেকআপ কাহিনি সেটাতো লোকের মুখে মুখে ।  কিছুদিন আগে শুভ্র সকালে ক্যাম্পাসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো ।  এমনটা সে প্রায়ই করে । সে জানে যে রিয়া আর আসবে না, তার সাথে দেখা করবে না । তাও সে দাঁড়িয়ে থাকে যদি রিয়া ভুল করেও এদিকে আসে । রাস্তার ওপাশে দাঁড়ানো একটা ছেলে শুভ্রকে দেখিয়ে  একটা মেয়েকে বলছে । আমি তোমাকে ঐ ছেলেটার মতো করে ভালোবাসতে পারবো । মেয়েটা শুভ্রকে দেখে বলল আরে ঐ লোকটা তো পাগল । ছেলেটা মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে .......

তারপর শুভ্রর ভালোবাসার কাহিনি বলতে শুরু করলো মেয়েটাকে । শুভ্রর গা ঘিন ঘিন করছিলো । তাই চলে গেলো । যাওয়ার পথেই রিয়ার সাথে দেখা । রিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে আজ । কিন্তু  পাশে এটা কে ? চেনা চেনা কেউ । সিগারেট খাচ্ছে রিয়ার পাশে রিক্সায় বসে । আর আজ রিয়া তাকে কিছুই বলছে না । শুভ্র ঠিকই বুঝতে পারছে এই সেই ছেলে ।  যার জন্য রিয়া শুভ্রকে ছেড়ে গেছে । তার সাথে যোগাযোগ রাখেনি । রিয়ার পরিবার এই ছেলেকে রিয়ার জন্য পছন্দ করেছে ।

আজ শুভ্র এক অন্য রকম হাঁসি হাঁসছে । এটা সুখের নাকি দুখের বোঝা যাচ্ছে না । তবে তার হাসিটা আজ রিয়া দেখেছে । রিয়া বুঝুক না বুঝুক রিয়া ফিরে তাকিয়েছে । এতেই শুভ্র অনেক খুশি । পকেটের টাকাটা  হাতে নিয়ে আজ সেই ভিখারীকে দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে শুভ্র । আজ আর মদের দোকানে যাবে না । আর কোনদিন মদ খাবে না সে । আগের মতো হয়ে যাবে । এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে ।

বাড়িতে ফিরে আজ মাকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্র।  মা আমাকে খেতে দাও । মা খুবই অবাক । শুভ্র রিয়ার সাথে ব্রেকআপের পর আর কখনও  বাড়িতে ভাত খাইনি । আদৌ ভাত খেয়েছে কিনা সেটা কেউ কখনও দেখেনি । তার মা তাকে ফ্রেশ হতে বলল । আর শুভ্রর প্রিয় প্রিয় প্রায় সব খাবার  রান্না করলো । শুভ্র খেয়ে বেড রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলো । বিকালে ঘুম থেকে উঠে  তার পুরানো সখের সেই বাইকটা নিয়ে ঘুরতে বের হলো । মাঝ পথে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল । তেল শেষ । পাম্পে তেল আনতে গেলো । পাম্প থেকে ফিরে সারা বিকাল  ‍ঘুরলো বাইকে । মনটা আজ তার খুব ভালো ।

পরদিন খুব সকালে তার বাবার দোকানে গেল । যেটা কিনা গত তিন বছরে  কেউ খুলেনি সেটা সে খুলল । দোকানটা সাজানোই আছে । শুধু ধুলা আর ময়লা পড়ে আছে । সারা দিন দোকান পরিস্কার করে বাড়ি ফিরে যেতেই অবাক । বাড়ির চারপাশে অনেক লোকজন । সবাই শুভ্রকে দেখতে এসেছে । শুভ্র আবার আগের মতো হয়ে গেছে । সবাই যেন ঈদের খুশি । ভিড়ের এক কোণে দাঁড়িয়ে সেই ভিখারীনি শুধু  কাঁদছে । এ কান্না দুখের না অনেক সুখের । আজ শুভ্র ভাবছে আর কি চাই জীবণে । আমার ভালো থাকাতে আমার পরিবার খুশি, আমার চারপাশ খুশি ।  আজ যেন সব কিছুই নতুন আর রঙিন লাগছে । শুধু শুধু আমার ভালোবাসা হারানোর বেদনায় চারপাশের মানুষকে কষ্ট দিবো কেন ?

 পরদিন থেকে দোকানে বসতে শুরু করেছে শুভ্র । অর্নাস পাশ করেও সে চারপাশের মানুষের এতো ভালোবাসা ছেড়ে চাকরিতে যেতে চাইনা ।  আস্তে আস্তে পরিবার নিয়ে শুভ্র বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । তবে সে  রিয়াকে ভোলেনি । এখনও দুপুরে বাড়িতে খাবার খেতে যাবার সময় কলেজের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পূঁজাতে মন্দির গুলোতে রিয়াকে খুঁজে ফিরে । তবে কখনও ফোন করে না আর কারো কাছে জানতে চাইনা । অজানা এক কষ্টে । বছর পেরিয়ে গেলো । দোকানটা ভালো চলছে । পাশাপাশি অন্য ব্যাবসাও করছে সে ।

একদিন রিয়ার বাবার সাথে দোকোনে দেখা । রিয়ার বাবা হাসপাতাল থেকে ফিরছেন । চোখে মুখে ক্লান্তি । শুভ্রকে দেখে এক চিলতে হাসি ঠোটের কোণে টেনে বললেন কেমন আছো বাবা । শুভ্র মাথা নেড়ে জানালো সে ভালোই আছে । কথায় কথায় জানতে পারলো । রিয়া হাসপাতালে । রিয়ার একটা ছেলে হয়েছে । শুভ্র শুনে তো খুব খুশি । দোকানের ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে ওখানে বসে থাকা সবাইকে মিষ্টি মুখ করালো সে । রিয়ার বাবা আরো কথা বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই জোর করে ওনার গালের ভিতর একটা মিষ্টি দিয়ে দিলো সে । সে এতটা খুশি যেন বাচ্চাটা তার নিজের হয়েছে ।

সবাই চলে যাবার পর রিয়ার বাবার চোখে জল দেখে শুভ্র একটু অবাকই হলো । কোন ভুল করলাম কি কাকাবাবু ? কোন অন্যায় হয়েছে কি ? রিয়া আর বাবু সোনাটা ভালো আছে তো ? কিছু তো বলুন । দয়া করে চুপ থাকবেন না । শুভ্র নিজেকে সামলাতে পারছে না । যেন দাপাদাপি করছে । এতক্ষণে রিয়ার বাবা মুখ খুললেন ।

শুভ্র বাবা তুমি রিয়াকে এতো ভালোবাসো । কেন তাকে জোর করে তোমার করে নাওনী, কেন তোমরা পালিয়ে বিয়ে করো নি  । তাহলে অন্তত এ দিন দেখতে হতো না । কাকাবাবু কি বলছেন এসব । কি হয়েছে খুলে বলুন । আর ভালোবাসাতে জোর- জবরদস্তি চলে না । কি হয়েছে দয়া করে সব খুলে বলুন ।

কি আর বলব বাবা । তুমি কোনো চাকরি করতে না । আর তোমরা আমাদের থেকে নিচু জাত তাই আমি আর রিয়ার মা তোমার সাথে রিয়ার বিয়েটা হতে দেয়নি । রিয়া আর তোমার ভালোবাসা আমরা আর আমাদের সমাজ মেনে নিতে চাইছিলো না । সমাজের কাছে আর নিজের গর্বের কাছে আমি হারতে চাইনি । আমাকে তুমি ক্ষমা করো বাবা । কাকাবাবু এতে কষ্ট পাওয়া বা ক্ষমা চাওয়ার কি আছে । প্রতিটা মেয়ের বাবাই চান তার মেয়ে সুখে থাকুক । রিয়া স্বামী সংসার আর সন্তান নিয়ে খুশি থাকুক । তাতেই আমার সুখ ।

এবার আর রিয়ার বাবা নিজেকে সামলাতে পারলেন না ।  বাবারে তুমি এতো বড় হৃদয় কোথায় পাও । রিয়ার বাবা শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন । আশে পাশে লোক জমে গেছে । কাকাবাবু আপনি কাঁদছেন কেন ? যা হবার তা তো হয়ে গেছে । রিয়ার স্বামী কোথায় ?  বাবা শুভ্র আমার রিয়ার স্বামী নেই ? মানে কি  কাকাবাবু ? রিয়ার বিয়ের খবর তো আমি পেয়েছিলাম । তাহলে কি কোন এক্সিডেন্ট ?  এবার কথা বলতে যেয়ে শুভ্রর কথা আটকে গেলো । সে থেমে গেলো । রিয়ার বাবা এখনও কাঁদছেন  আর বলছেন । বাবা তুমি চাকরি করো না আর তুমি নিচু জাত বলে তোমার সাথে রিয়ার সর্ম্পকটা ভেঙে দেই । তারপর ভালো চাকরি আর উচু জাত দেখে রিয়ার সাথে সুমনের (রিয়ার বর) বিয়ে দিই । কিন্তু সুমন এক বছরের মাথায় রিয়াকে ছেড়ে দেয় । অন্য এক মেয়েকে নিয়ে সংসার করছে  সে । আমাদের কারো কথা সুমন রাখে নি । রিয়া অপারেশন থিয়েটারে যাবার আগে বার বার তোমার কথা বলছিল । আমাকে বলেছে । সে যদি মরে যায় তাহলে তার লাশটা যেন তোমার কাছে পাঠানো হয় । বাবা তুমি আমাদের ক্ষমা করো । আমি রাস্তায় থাকতে খবর পেলাম তার ছেলে হয়েছে । তুমি তাকে একটিবার দেখতে যাবে বাবা । তোমার পাঁয়ে ধরি । সে খুব  ‍খুশি হবে ।

শুভ্রর চোখে এবার জল ছল ছল করে উঠল । রিয়াকে দেখতে ছুটে গেলো । রিয়া হাসপাতালের বেডে । পাশে একটা বাচ্চা । শুভ্রকে দেখে রিয়া বেড থেকে নামতে গেলো কিন্ত প্রচন্ড ব্যথায় মেঝেতে বসে পড়লো । শুভ্র তাকে আবার বেডে তুলে দিয়ে চলে আসছিলো । এবার রিয়া শুভ্রকে হাতটা ধরে বলল  শুভ্র আমার ছেলেটার একটা নাম রেখে যাও । আমি মরে গেলেও কোন সমস্যা নেই । তুমি আমাকে দেখতে এসেছো । আমার সব কষ্ট মুছে গেছে ।

শুভ্র ছলছল চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ রিয়াকে জড়িয়ে ধরে এতো দিনের না বলা কথাটা আজ বলেই  ফেলল ।

Ria My Sweet Heart,
                             Will You Marry Me ?? Plz Plz Plz........

Ria Just Crying loudly  ................................... Yes. I do. I do.. I do Plz Shuvro Marry Me Now.   I don’t want to wait. I can’t . I wan’t to be your untill my death.

Ria’s Father and Mother also Crying Like New Born Baby. But they are all Now  Happy .

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : সুব্রত সরকার

Comments

Popular posts from this blog

বউ আমার বস

মেয়েটি ছেলেটির বাইক দেখে প্রেমে পড়ল অতপর

যাযাবর আমি